ত্রিদোষ ও ফলাহার
.
আজ আপনাদের ত্রিদোষ এর কথা বলব। এই ত্রিদোষ এর কথা আপনারা সকলেই আগে বহুবার শুনেছেন | আমাদের শরীরে তিন দোষ আছে – বাত, পিত্ত ও কফ । যদি এই তিন দোষ সম তে থাকে অর্থাৎ যতটা থাকা উচিৎ ততটাই থাকে তবে নিরোগী শরীর হবে আর যদি এই দোষ কুপিত হয়ে যায় তো আমাদের রোগ হবে । তাই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের লক্ষ্য হল আমরা সবাই নিজেদের বাত, পিত্ত ও কফ এই তিন দোষকে সমান রাখি ।
.
আমাদের মানব শরীর পঞ্চভূতের সমন্বয়ে তৈরী হয় । এই পঞ্চভূত এর ক্রম – আকাশ, বায়ু, অগ্নি, নীর ও পৃথিবী । আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের ঋষিরা একে আরও সরল করে দিলেন। এদের তিন ভাগে ভাগ করে – বাত (আকাশ ও বায়ু তত্ত্ব) , পিত্ত (অগ্নি ও জল তত্ত্ব) ও কফ (জল ও পৃথিবী তত্ত্ব) । এইভাবে বাত, পিত্ত ও কফ এই তিন দোষের আবির্ভাব হল
.
ত্রিদোষের আলোকে নিম্নে কিছু ফলের গুনাগুনের আলোচনাঃ
.
★ ০১. আমঃ
কাঁচা আম-ইহাতে বায়ু পিত্ত ও কফ বাড়ে এবং রক্ত দুষিত হয়।
পাকা আম- ইহাতে বায়ু পিত্ত ও কফ কমে, শরীর পরিপুষ্ট হয়। গায়ের রং উজ্জল ও ফর্সা হয়। অত্যান্ত তৃপ্তিজনক পিপাসাও পরিশ্রমে ক্লান্তি দূর করে।
আমসী- খেলে তরল পায়খানা হয় কিন্তু বায়ু ও কফ দূর করে।
আমসত্ত- খেয়ে তৃষ্ণা, বমি, আমাশা দূর হয় কিন্তু পায়খানা তরল হয়।
★ ০২. কাঠালঃ
কাঁঠাল দেরীতে হজম হয়। শুক্র, বল ও বীর্য ও শরীর পরিপুষ্ট হয়, কফ ও বাত বাড়ে এবং রক্ত পিত্তদাহ ও শোথ থাকলে কমে।
★ ০৩. নারিকেলঃ
ঝুনা নারিকেল- দেরীতে হজম হয় কিন্তু পিত্ত বাড়ে।
কাঁচা নারিকেল- ইহাতে পিত্ত কমে।
ডাবের পানি- ইহাতে অতিসার ও ডায়েরিয়া ও কলেরা নিবারিত হয়। অম্লপিত্ত দাহ ও তৃষ্ণা নিবারিত হয়। কিন্তু মুত্র বাড়ায়।
★ ০৪. পেয়ারা- পেয়ারা দেরিতে হজম হয় কিন্তু পিত্ত ও বায়ু কমায়।
★ ০৫. নাশপাতি- ইহা সহজেই হজম হয়। ত্রিদোষ কমায় কিন্তু শুক্র ও ধাতু বাড়ায়।
★ ০৬. আতাফল- আতা ফল হজম হয় দেরিতে। বল ও মাংশ বাড়ায় ও রক্তপিত্ত এবং বায়ু কমায়।
★ ০৭. কলা- শুক্র, মাংশ ও কফ বাড়ায় এবং মেহ ও বায়ু দূর করে। এবং কাঁচকলা বল ও রক্ত বাড়ায় কিন্তু পায়খানা কমায়।
★ ০৮. আলুঃ
লাল আলু- লাল আলু দেরীতে হজম হয় কিন্তু শক্তি বাড়ায়। ফুসফুসের হৃদয়পিন্ডের জমা কফ বাহির করে দেয়।
শাখ আলু- ঠান্ডা গুণ এবং বায়ুপিত্ত ও কফ দূর করে।
★ ০৯. বেলঃ
কদবেল- পায়খানা কমায়, বায়ু, পিত্ত, ঘা, শ্বাসকাশ, বমি হৃদরোগ ও বিষদুষ দূর করে।
কাঁচাবেল- হজমী কারক পায়খানা কমায়। বায়ু, কফ, জ্বর ও অতিসারে খুবই উপকারী।
পাকাবেল- দেরীতে হজম হয় কিন্তু ত্রিদোষ বাড়ায়।
★ ১০. ফুটিফল বা বাঙ্গী- দাহ, জ্বালা পোড়া, মূত্র, কৃষ্ণ ও পাথর রোগে উপকারী।
কচি শসা- হজম দেরীতে, শুক্র ও বাত বাড়ায়, কফ, কুষ্টি ও ক্রিমি কমায়।
★ ১১. তরমুজ- হজম বাড়ায় ও বায়ু কমায়।
★ ১২. পেঁপে- হজম বাড়ায়, কফ, পিত্ত কমায়। চোখের উপকার করে। জ্বর তৃষ্ণা কামেলা, বাত জ্বর, মুগ্র কৃষ্ট, রক্ত, পিত্ত, মেহ ও স্বর ভেঙ্গে বিশেষ উপকারী।
★ ১৩. পাকা তাল- দেরীতে হজম হয় ও ত্রিদোষ বাড়ায়।
১৪. খেজুরঃ
পাকা খেজুর- দেরীতে হজম হয়। তৃপ্তি, পুষ্টি, বল ও শুক্র বাড়ায়। রক্ত, পিত্ত, ক্ষয় রোগ, বায়ু, বমি, জ্বর, শ্বাস কাম, মুর্ছা মদ্যপানজনিত রোগ, বায়ু, পিত্ত রোগ দূর করে।
খেজুর রস- হজম, বল, শুক্র ও মূত্র বাড়ায় এবং শ্লেমা কমায়।
★ ১৫. জামঃ
জাম- বায়ু বাড়ায় এবং কফ ও পিত্ত কমায়।
গোলাপ জাম- রুচি করে ঠান্ডাগুণ এবং দেরীতে হজম হয়।
জামরুল- দেরীতে হজম হয়। বাত ও কফ কমায়।
★ ১৬. আনারস- ক্রিমি, সর্দি, জ্বর নিবারক রস বাড়ায়।
★ ১৭. মীষ্টি ডালিম- সহজে হজম হয়। শুক্র, বল ও মেধা বাড়ায়। মুখের রুচিও বাড়ায়। তৃষ্ণা, দাহ, জ্বর, অতিসার ও গ্রহনী রোগে বিশেষ উপকারী।
★ ১৮. বড়ইঃ
বড়ই- দেরীতে হজম হয়। শুক্র বাড়ায়, পুষ্টি বাড়ে এবং পায়খানা কমায়। তৃষ্ণা, রক্ত, পিত্ত ও ক্ষত রোগে বিশেষ উপকারী।
ছোট বড়ই- বাত ও পিত্ত কমায়।
★ ১৯. কামরাঙ্গা- মুখের রুচি বাড়ায়, কফ ও বায়ু কমায়।
★২০. চালতা- যদিও দেরীতে হজম হয়। পায়খানা কষায়, শরীরের বিষণ দোষ দূর করে।
★২১. ফরমজা- তৃষ্ণা কমায়, পিত্ত বাড়ায়।
★২২. জলপাই- ইহা সহজে হজম হয়। বায়ু ও কফ কমায়।
★২৩. তেতুলঃ
কাঁচা তেতুল- রক্ত পিত্ত, আমদোষ বাড়ায় কিন্তু বায়ু ও শুল রোগ কমায়।
পাকা তেতুল- ইহা সহজেই হজম হয় ও পায়খানা পরিস্কার করে এবং কফ ও বায়ু কমায়।
★২৪. জাম্বুরা- রুচি বাড়ায়। বায়ু, রক্তপিত্ত, শ্বাস কাশ, ক্ষয়রোগ, হিক্কা শোথ, অম্ল পিত্ত, পুরাতন আমাশা ও রক্তহীনতায় খুবই উপকারী।
★২৫. কিসমিস- দেরীতে হজম হয়। প্রস্রাব কমায়, শরীরে
★২৬. মনাক্কা- শুক্র বাড়ায়, চক্ষুরোগ, জ্বর, তৃষ্ণা, বাত, রক্ত কামলা, মুত্রকৃচ্ছ, রক্তপিত্ত, মেহ শোথ, মদ্যপ্যায়ীদের রোগসমুহ ও স্বর ভঙ্গ রোগে বিশেষ উপকারী। পায়খানা কষায়, কফ ও পিত্তরোগ দূর করে।
পেস্তা- পুষ্টিবল ও শুক্র বাড়ায়।
★২৭. বাদাম- দেরীতে হজম হয়। কফ ও শুক্র বাড়ায়, রক্ত পিত্ত রোগে ক্ষতি করে।
★২৮. আঙ্গুর ফল- তৃষ্ণা, মুছা, দাহ জ্বর, শ্বাস ও বমি রোগে বিশেষ উপকারী।
★২৯. শিঙ্গাড়া/ননিফল- দেরীতে হজম হয়। পায়খানা কষায়, শুক্র বাড়ায় ও বাত, পিত্তদাহ ও রক্তপিত্ত রোগের উপকার হয়।
★৩০. লেবুঃ
কমলালেবু- হজমী কারক, রুচি বাড়ায়, চক্ষুরোগ, পেটের রোগ, কুষ্ঠরোগ, অর্জীণ, শুলরোগ, জ্বর, কাশ, বমি ও তৃষ্ণা এবং বায়ু রোগে বিশেষ উপকারী।
কাজী লেবু- ইহা সহজেই হজম হয়, বাত শ্লেমা ও বমি নিবারক।
জামির লেবু- রুচিকারক, হজমশক্তি, বল ও পিত্ত বাড়ায়, বমি কমায়।
টাবা লেবু- হজম শক্তি বাড়ায়, পায়খানা পরিস্কার করে। শ্বাস, কাশ, বমি, গুল, হিক্কা, পেট ফাঁপা, হৃদরোগ ও গুল্ম, প্লীহা প্রভৃতি রোগ দূর করে ।